চোখের কালো দাগ (Dark circles)
আজ আমরা কথা বলবো চোখের কালো দাগ নিয়ে যাকে আমরা ডার্ক সার্কেলস ও বলে থাকি। আমাদের চোখের চারপাশে কালো দাগের সমস্যা দেখা যায় কম বেশি সবারই।এই সমস্যার কারনে আমাদের চেহারা ফ্যাকাশে দেখা যায় বা কখনো এইজড মনে হয়।তাই আমরা সবাই চোখের কালো দাগ দূর করতে চাই।
এই কালো দাগের অনেকগুলো কারণ থাকে,তবে তার আগে অবশ্যই আমাদের বুঝতে হবে চোখের এনাটমি কেমন!
ডার্ক সার্কেল এনাটমি:
চোখের চারপাশের ডার্কসার্কেল অর্থাৎ পেরিওকুলার ডার্ক সার্কেলস অনেক ফেসিয়াল এনাটমি ফ্যাক্টর এর কারনে দেখা দেয়।আমাদের ফেসিয়াল লিগামেন্টস স্ট্রাকচার, ফেইস বোন স্ট্রাকচার এবং লক্ষণীয় অরবিকিউলারিস অকিউলিমাসেল এমন ভাবে সাজানো যার কারনে সহজেই চোখের কালো দাগ দৃষ্টিগোচর হয় এবং ফেইসের এই গঠন আমরা চাইলেই পরিবর্তন করতে পারিনা। এছাড়া চোখের পাতা (আইলিড)তুলনামূলকভাবে পাতলা, যাতে কম বা কোনো সাবকিউটেনিয়াস(ত্বকের গভীরতম স্তর) টিস্যু দেখা যায় না।এসব কারনে চোখের কালো দাগের সমস্যা দেখা দেয়।
ক্লান্তি:
ক্লান্তি,অনেক বেশি ঘুমানো বা পর্যাপ্ত ঘুমের অভাব এসব কিছুর কারনে চোখের ডার্কসার্কেল দেখা যায় এবং ত্বক ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে চোখের পাতলা আইলিড এর ডার্ক টিস্যু ও রক্তনালী গুলো আরো বেশি লক্ষ্যনীয় হয়ে ওঠে।এছাড়া চোখের পাফিনেস ও তৈরি হয়।যা চোখের নিচে কালো দাগ তৈরি করে।
টেকনলোজি
কম্পিউটার, টিভি, মোবাইল এসব ছাড়া আজকাল একটা দিন ও কাটানো আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়।বিশেষ করে মোবাইল ফোন ছাড়া থাকা খুব কঠিন কাজ,মোবাইল ফোন ছাড়া থাকতে হবে ভাবলেই দুশ্চিন্তা শুরু হয়ে যায় আমাদের মধ্যে আর তাই একে এক ধরণের ফোবিয়া বলে যাকে নাম দেওয়া হয়েছে নোমোফোবিয়া (Nomophobia-no mobile phobia)।তাই সারাদিন এসব প্রযুক্তির স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকার ফলে আমাদের চোখের ক্ষতি হয় এবং চোখের ত্বকের উপর বিশেষ প্রভাব পড়ে।এতে চোখের রক্তনালী আরো প্রসারিত হয়ে চোখের চারপাশে কালো দাগ তৈরি করে।শুধু তাই নয়,এসব ডিভাইস যখন তাপমাত্রায় গরম হয়ে যায় তা স্কিনের নরমাল মেলানিন প্রডাকশনকে ব্যহত করে ত্বকে কালো দাগ তৈরী করে ধীরে ধীরে।এছাড়া রাতে অন্ধকার রুমে বেশি সময় ধরে মোবাইল চালানোর ফলে সারাদিন কাজের পর চোখের প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নষ্ট হয়। এতে চোখ ফোলা ও পরবর্তী তে দেখা যায় চোখের কালো দাগ।
বার্ধক্য
বার্ধক্য মানুষের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।বয়স যত বাড়ে,চোখে কালো দাগ দেখা দেয় কারণ আমাদের পাতলা চোখের ত্বক আরো পাতলা হওয়া শুরু করে, এতে প্রয়োজনীয় ফ্যাট ও কোলাজেন কমে যায় এতে ব্লাড সেল গুলো আরো ঘন হয়ে দেখা যায়।এছাড়া অনেকের চোখ এ ফোলাভাব বা পাফিনেস দেখা যায়।
এলার্জি
এলার্জির সমস্যার কারনে শরীর থেকে হিস্টামিন রিলিজ হয় যা ব্লাড ভেসেল কে প্রসারিত করে এছাড়া চোখের চুলকানি ও অস্বস্তি তৈরি করে ফলে চোখ বারবার মোছা বা ঘষাঘষির উপক্রম হয় এতে চোখের কালো দাগ বেশি লক্ষ্যনীয় হয়ে ওঠে।
রক্তশূন্যতা
রেড ব্লাড সেল এর পরিমাণ শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে তাকে এনিমিয়া বা রক্তশূন্যতা বলা হয়। জিংক, আইরন এর পরিমাণ কম থাকার ফলে ব্লাড সেল বডিতে পর্যাপ্ত অক্সিজেন বহন করতে সক্ষম হয় না।যার ফলে চোখের ডার্ক সার্কেল এবং চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যায়।
ডিহাইড্রেশন
পানির অভাব ডিহাইড্রেশনের প্রধান কারন তাই পানি পরিমাণে কম খাওয়া মানেই নানান সমস্যা দেখা দেওয়া।একইভাবে অনেক অভ্যাস আছে যে গুলো ও ডিহাইড্রেশন এর কারণ।যেমন, এলকোহল পান, সিগারেট খাওয়া।সিগারেট এ অধিক পরিমাণ কার্বন মনো অক্সাইড থাকে যা ত্বকের পর্যাপ্ত অক্সিজেন সরবরাহে বাধা দেয় আবার এলকোহল পানের ফলে ঘুমের অভাবও দেখা দেয়।তাই ডিহাইড্রেশন এর ফলে চোখের নিচের ভেসেল গুলো বেশি দৃষ্টিগোচর হয়।এছাড়া ধুমপান এজিং কে অনেক ত্বরান্বিত করে, ফলস্বরূপ চোখের কালো দাগ দেখা দেয় বয়সের আগেই।
জিনগত কারণ
পরিবারের অনেকের ই চোখের কালো দাগ থাকে, দেখা যায় একই পরিবারে অনেকেরই চোখে কালো দাগ আছে ছোট বা বড় সবারই।বয়সের আগে এই ধরনের কালো দাগের কারণ পরিবারের সবার একইধরনের জিন বহন। যে জিনে হয়ত মেলানিন প্রডাকশন বেশি বা কোলাজেন লেভেল কম।মেলানিন হলো ব্রাউন বা ব্ল্যাক পিগমেন্টশন যা বেশি হলে ডার্ক সার্কেল তৈরি হয়।এছাড়া অতিরিক্ত সূর্যরশ্মি তে গেলেও মেলানিন বেড়ে যায় এবং চোখে কালো দাগ দেখা যায়।
মোটকথা অনেক অনেক কারনে চোখের কালো দাগ আমাদের জীবনের একটা অংশ হয়ে যায়।তবে এটি দূর করার বা হালকা করার অনেক উপায় আছে।যা আমাদের পরবর্তী আলোচনার অংশ।